শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিয়ম মানছে না গণপরিবহন, ওয়েবিলের কথা বলে বাড়তি ভাড়া আদায়

 

দুই মাস পার হতে না হতেই ঢাকার গণপরিবহনগুলোতে শুরু হয়েছে ভাড়া নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা। চ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া রাখা হচ্ছে গণপরিবহনে। সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি রুটে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কেউ রাখছে নিজেদের ইচ্ছেমতো, আবার কেউ রাখছে ওয়েবিলের কথা বলে। আর বাসে রাখা হচ্ছে না ভাড়া তালিকা। যাত্রীদের কেউ ন্যায্য ভাড়া দিতে চাইলে তর্কে জড়াচ্ছেন বাসের সহকারী, এমনকি চালকেরাও শোনাচ্ছেন কটু কথা।

গত নভেম্বরের শুরুর দিকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সব ধরনের জ্বালানিচালিত বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া শুরু হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে অর্ধেক বাস ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসে। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালাতে থাকে তারা। এসবের চাপে নভেম্বরের মাঝামাঝি বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

শুরুর দিকে বেশির ভাগ গণপরিবহনই নির্ধারিত ভাড়া নিত। কিন্তু এরই মধ্যে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। প্রায় সব গণপরিবহনই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার কয়েকটি রুটের অন্তত ১৫ জন যাত্রী। ব্যতিক্রম শুধু গত মাসে চালু হওয়া রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে চলা ঢাকা নগর পরিবহন।

ওয়েবিল কী?
বাসে কতজন যাত্রী থাকেন, সেই হিসাব মালিকের পরিদর্শক যে কাগজে লিখে দেন, সেটাই ওয়েবিল। একটি রুটে সাধারণত নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় মালিকের লোকেরা এই পরিদর্শন বা চেক করেন। পথে যাত্রীরা যেখানেই নামেন না কেন, নির্দিষ্ট দূরত্বের ভাড়া দিতে হয়। ধরা যাক, একজন যাত্রী মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে আগারগাঁও যাবেন। ওয়েবিল ব্যবস্থায় ভাড়া দিতে হবে ফার্মগেট পর্যন্ত।

সরেজমিন দেখা গেলো, শফিকুল ইসলাম ও মনসুর আলম একই বাসের পাশাপাশি আসনে বসে আছেন। গন্তব্যও এক মহাখালী। প্রথমজন বাসে উঠেছেন আসাদগেট থেকে, অন্যজন খামারবাড়ি থেকে। এ দুইয়ের মধ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ওয়েবিল (বাসমালিকের বেঁধে দেওয়া ভাড়া) পরীক্ষা করা হয়।

বিকাশ পরিবহনের সেই বাসে সরকার নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ১৫ পয়সা মেনেই ভাড়ার তালিকা ঝোলানো আছে। তবে বাসের সামনের কাচের দরজার আড়ালে। চলন্ত বাসে কাছাকাছি গিয়ে তালিকাটি পড়া অসম্ভব নয়, তবে কঠিন।

এরই মধ্যে শফিকুল ইসলাম ও মনসুর আলমের কাছে ২০ টাকা করে ভাড়া চাইলেন চালকের সহকারী। নির্ধারিত ভাড়া সম্পর্কে তাঁদের ধারণা না থাকলেও এতটুকু পথের ভাড়া এত বেশি কেন জানতে চাইলে দুই পক্ষে তর্ক শুরু হয়। চালকের সহকারী মোহাম্মদ রফিক বললেন, সামনে গিয়ে তালিকা দেখে আসেন।

ভাড়ার তালিকা অনুসারে, খামারবাড়ি থেকে বনানীর ভাড়া ১০ টাকা। সম্প্রতি সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া এটি। তাহলে ২০ টাকা কেন চাইলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ রফিক বলেন, ভাড়া কত লেখা, তা জানি না। পড়তে পারি না।

আসলে ভাড়ার তালিকা নয়, বরং ওয়েবিলের নির্ধারিত ভাড়া চেয়েছিলেন রফিক। তর্কাতর্কির পর শফিকুল ইসলাম ও মনসুর আলম দুজনই ১৫ টাকা করে ভাড়া দিলেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি তো ওয়েবিলের পরে উঠেছি। তারপরও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা রাখেনি।

আজিমপুর থেকে আবদুল্লাহপুরের ধউর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত যায় বিকাশ পরিবহনের বাসগুলো। সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুসারে, পুরো পথের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার, এ পথের ভাড়া ৫৯ টাকা। এ ছাড়া চার্ট অনুযায়ী মধ্যে ছয়টি স্টপেজ হিসেবে ভাড়া নির্ধারিত।

তবে এ পথে ভাড়া নেওয়া হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বনানী ও আবদুল্লাহপুর—এই তিন ওয়েবিলের হিসাবে। প্রথম দুটি ওয়েবিলে প্রতিটি পার হওয়ার জন্য যাত্রীকে ২০ টাকা করে এবং শেষেরটির জন্য ১৫ টাকা দিতে হয়। আজিমপুর থেকে ধউর—এ পথে সরকার নির্ধারিত তালিকার চেয়ে এ দূরত্বে ওয়েবিলের ভাড়া কম। কিন্তু স্বল্প দূরত্বে চলতে গেলেই গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

দেওয়ান পরিবহনের বাস আজিমপুরের পলাশী থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত চলে। রাহভী ইসলাম বাড্ডা লিংক রোড থেকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে যাবেন। ওয়েবিলের হিসাবে এ দূরত্বের ভাড়া ২৬ টাকা। কিন্তু চালকের সহকারী ভাড়া চাইলেন ৪০ টাকা, অর্থাৎ নির্ধারিত ভাড়ার দেড় গুণ। এই বাসে ভাড়ার তালিকাও ছিল না।

তবে গুগল মানচিত্রে দূরত্ব মেপে ২০ টাকা ভাড়া ধরে এর অর্ধেক ১০ টাকা দেন শিক্ষার্থী রাহভী ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়েবিলের হিসাবে ভাড়া চায় তারা। কিন্তু আমি মানচিত্রে দূরত্ব দেখে ভাড়া দিই নিয়মিত। তবে বাসের বেশির ভাগ মানুষই সচেতন নয়। যা চায়, তাই দেয়।

একই বাসে মহাখালী থেকে এলিফ্যান্ট রোডের সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যাচ্ছিলেন উৎপল সাহা। নির্ধারিত তালিকা অনুসারে, এ পথের ভাড়া ১৮ টাকা। কিন্তু তিনি ভাড়া দিয়েছেন ২৫ টাকা। উৎপল সাহা বলেন, তালিকা দেখতে চাইলে খারাপ ব্যবহার করে। মানসম্মানের ভয়ে কিছু বলি না।

আল-মক্কা পরিবহন চলে দিয়াবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ। সে বাসেই যাচ্ছিলেন আবু হানিফ। তালিকা অনুসারে, মহাখালী থেকে পল্টনের ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে রাখা হয়েছে ২০ টাকা। ওয়েবিলের কথা বলে এ ভাড়া রাখা হয়েছে।

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট