শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে আসার পথে অস্ত্রবাহী কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, মৃত ৮

 

সার্বিয়ার নিস থেকে গ্রিস হয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছিল অস্ত্রবাহী বিমানটি৷ রবিবার সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রিসের কাভালার কাছে কার্গো বিমান দুর্ঘটনায় আটজন ক্রু সদস্যর মৃত্যু হয়েছে৷

মন্ত্রী নেবোয়শা স্টেফানোভিচ বলেছেন, ইউক্রেনের আন্তোনোভ অ্যান-১২ বিমানটি প্রায় ১১ টনঅস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছিল৷ এর মধ্যে ছিল বিপুল পরিমাণে ল্যান্ডমাইন৷ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা৷ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আট জন ক্রু সদস্য দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন৷'' এই বিমানটি রাশইয়ার তৈরি৷ তবে চার ইঞ্জিনের টার্বো প্রোপটির মালিক একটি ইউক্রেনীয় সংস্থা৷

বিমানটি পরিচালনাকারী ইউক্রেনীয় কার্গো এয়ারলাইন মেরিডিয়ানের জেনারেল ডিরেক্টর ডেনিস বোহডানোভিচ ডয়চে ভেলেকে বলেন যে ক্রুরা সবাই ইউক্রেনীয়৷ তবে তিনি কার্গো বিমান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি৷

স্টেফানোভিচ বলেন, শনিবার রাত ৮.৪০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) সার্বিয়ার নিস বিমানবন্দর থেকে বিমানটি রওনা দেয়৷ সার্বিয়ার বেসরকারি কোম্পানি ভ্যালিরের মালিকানাধীন অস্ত্র বহন করছিল সেটি৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রত্যক্ষদর্শীদের দ্বারা শেয়ার করা ভিডিওগুলিতে দেখা গিয়েছে মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশালাকার আগুনের গোলা বিমানটিকে ঘিরে ফেলে৷

গ্রিক সংবাদমাধ্যম বলেছে কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের জন্য ছাড়পত্রের অনুরোধ করেছিল কিন্তু বার্তা পৌঁছায়নি৷ গ্রিসের উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলি রবিবার একটি ড্রোন ব্যবহার করে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খতিয়ে দেখছে৷ তবে পণ্যগুলি থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে তারা৷

ধ্বংসাবশেষ এবং গোলাবারুদ না সরানো পর্যন্ত গ্রামবাসীদের দুর্ঘটনার কাছাকাছি মাঠে যেতে নিষেধ করা হয়৷ এছাড়াও গোলাবারুদ বিস্ফোরণের আশঙ্কাও ছিল৷ থেসালোনিকিতে ইউক্রেনের কনসাল ভাদিম সাবলুক রবিবার এলাকাটি ঘুরে দেখেন৷

এথেন্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, তিনি কর্তৃপক্ষকে আটজন ক্রুর পরিচয় জানিয়েছেন৷ তিনি নিশ্চিত করেছেন যে বিমানটি বাংলাদেশে যাচ্ছিল৷ সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, অস্ত্রের চালানটি ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে'' বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে তবেই করা হয়েছিল৷ভাদিম বলেন, ‘‘ দুর্ভাগ্যবশত কিছু মিডিয়া অনুমান করেছে যে বিমানটি ইউক্রেনে অস্ত্র বহন করছিল কিন্তু এটি সম্পূর্ণ অসত্য৷''


গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে সেনাবাহিনী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং গ্রিক পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলটি নিরাপদ বলে বিবেচিত হলে তবে সেখানে যাবে৷ দমকলবিভাগের এক কর্মকর্তা মারিওস অ্যাপোস্টোলিডিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিশেষ সরঞ্জাম এবং পরিমাপ যন্ত্রের সঙ্গে দমকল কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছান৷ মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলি খতিয়ে দেখেছেন৷'' নিরাপদ হলে তদন্তকারীরা প্রবেশ করবেন বলেও জানান তিনি৷

২৬ জন দমকলকর্মী এবং সাতটি ফায়ার ইঞ্জিন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল কিন্তু এখনও দুর্ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছানো যায়নি–স্থানীয় কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন৷একটি স্থানীয় চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে মাঠে ভেঙে পড়ার ছবি এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষ বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন দেখা গিয়েছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা শনিবার জানান, তারা বিমানটিতে আগুন দেখেছেন, বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন৷ দুর্ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের শনিবার রাতে ঘরের ভিতরে থাকতে বলা হয়৷ মুখোশ পরতেও বলা হয় তাদের৷ বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের ফলে রবিবার ভোরে দুই দমকলকর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷

স্থানীয় এক ব্যক্তি, গিওরগোস আর্কনটোপোলোস, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইআরটি টেলিভিশনকে বলেছেন যে তিনি বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে৷ তার কথায়, ‘‘রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ শুনে আমি অবাক হই৷ বাইরে গিয়ে দেখি ইঞ্জিনে আগুন লেগেছে৷''

এথেন্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করা হবে৷''

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট