শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইউনেস্কো পুরস্কার জিতলো দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ

 

জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা বা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার কাছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো একটি মসজিদ। এ মসজিদটির নাম দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।

পহেলা ডিসেম্বর ইউনেস্কোর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অফিস থেকে অনলাইনে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল - ফিজি থেকে শুরু করে কাজাখাস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে প্রতিবছর স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।

সেজন্য এ পুরস্কারের নাম দেয়া হয়েছে 'এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনসারভেশন'। ইউনেস্কো জানিয়েছে ২০২১ সালে ছয়টি দেশের নয়টি স্থাপনাকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে 'অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট' ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থাপনা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত এই মসজিদ নির্মিত হয় ১৮৬৮ সালে। কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর ইউনিয়নে এই মসজিদ অবস্থিত। ১৮৬৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার জনসংখ্যার বিবেচনায় এটি ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর মসজিদটি একাধিকবার সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।

কালের পরিক্রমায় এই মসজিদের অবকাঠামো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছিল। কয়েক বছর আগে মসজিদটিকে সংস্কার করে পুরোনো রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেন সেখানকার সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এ সংস্কার কাজের নেতৃত্ব দেন এবং ২০১৮ সালে এর সংস্কার কাজ শেষ হয়।

পুরোনো মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরোনো মসজিদটি এখন লাইব্রেরি এবং মক্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাবার জন্য স্থপতি মি. আহমেদ আবেদন করেন। ইউনেস্কো এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব স্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যের যে বৈচিত্র্য ধরে রাখা হয়েছে সেটি সত্যিই প্রশংসার বিষয়। যেসব স্থাপনা পুরস্কার পেয়েছে সেগুলোতে টেকসই উন্নয়নের নানা দিক রয়েছে বলে ইউনেস্কো বলছে।

পুরোনো স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ঠিকমতো হয়েছে কি না, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ জানালেন, সে মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে দোলেশ্বর হানাফিয়া মসজিদ। পুরোনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগকে উৎসাহ দেয় ইউনেস্কো। সে জন্য ২০০০ সাল থেকে এ পুরষ্কার চালু করেছে ইউনেস্কো।

সাধারণত বাংলাদেশে পুরনো মসজিদ ভেঙ্গে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরোনোটা রেখে নতুনটা তৈরি করা হয়েছে। এবং পুরোনোটাকে একেবারে আদি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বলেন স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ।

দেড়শ বছর আগে চুনসুরকি দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ জানালেন, এ মসজিদকে পুরোনো রূপ দেবার জন্য চুনসুরকি দিয়ে সংস্কার করতে হয়েছে। মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেড়শ বছর আগে এই মসজিদটি নির্মাণের সাথে তার পূর্বপুরুষদের ভূমিকা ছিল। "আমাদের লক্ষ্য ছিল, পুরোনোকে সাথে নিয়ে নতুনের কথা বলা," বলেন নসরুল হামিদ। স্থাপনা হিসেবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব এই অঞ্চলে পুরনো স্থাপত্যের কথা উঠলেই মসজিদ, মন্দির এবং চার্চসহ নানাবিধ ধর্মীয় স্থাপনা সামনে চলে আসে। এ ছাড়া কিছু জমিদারবাড়িও দেখা যায়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন জমিদারবাড়ি বিলীন হয়ে যাবার দশা হয়েছে।

স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, এ অঞ্চলের মসজিদগুলো আরব দেশের মসজিদগুলোর চেয়ে ভিন্ন ধাঁচের। "আমাদের পুরোনো মসজিদগুলোতে কোথাও মিনার পাবেন না। মিনার বলতে বাঙালিরা সে রকম কিছুই চিনত না। যেভাবে চুনসুরকি দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো সেটিও অন্যদের তুলনায় ভিন্ন" যখন কোনো অঞ্চলে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তখন বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন করা হলেও ধর্মীয় স্থাপনাগুলো সাধারণত ধ্বংস করা হয় না। সেজন্য এগুলো টিকে থাকে।

 

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট