বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে অভিনব উপায়ে দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন। হর্টিকালচার সেন্টারের নালা ও জঙ্গলে এখন দৃশ্যমান এই মজবুত রাস্তা। এতে অবাক হয়েছেন অটোরাইস মিলের শ্রমিক,কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। পরিত্যক্ত ছাই দিয়ে রাস্তা তৈরি করে সকলের প্রশংসার দাবিদার হয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে প্রায় ৩ হাজার ট্রাক্টর ছাইয়ের তৈরি রাস্তা এতোটাই মজবুত হয়েছে যে, ভারী যানবহন চলাচলেও সক্ষম এই রাস্তাটি। কোনরকম সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই ছাই দিয়ে তৈরি এই রাস্তা দিয়েই হর্টিকালচার সেন্টারে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন। এই রাস্তার দুই ধার দিয়ে ১০ হাজার কলাগাছ ও ১০ হাজার সুপারিগাছ লাগানো হয়েছে। 

অথচ ১ বছর আগেও আয়তনে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের প্রায় ১০ একর জায়গা জঙ্গলের মধ্যে ছিল। ঝোপঝাড় ও জঙ্গলের মধ্যে থাকা এসব জায়গায় ব্যবহার করতে পারতো না হর্টিকালচার কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রায় দক্ষিণ অংশের প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে ঝোঁপঝাড়ের কারনে কেউ যেতেই পারতো না। এর সুযোগে স্থানীয় বখাটে ও মাদকসেবিদের আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছিল জঙ্গলে ঢেকে ঢাকা বিশাল এলাকা। এই সুযোগে বিভিন্ন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়ে পড়ে জঙ্গল এলাকা। 

গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে যোগদান করার পর বিশাল অরক্ষিত এলাকা উদ্ধারে উদ্যোগ নেন উপ-পরিচালক মো.মোজদার হোসেন। শুরু করেন জঙ্গল পরিষ্কার অভিযান। প্রায় ১০ একর জায়গা পরিষ্কার হলেও পানির নালা ও রাস্তা না থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। তাই উদ্বার হওয়া জমি ব্যবহার উপযোগী করতে হর্টিকালচার সেন্টারের সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেন কৃষিবিদ মো. মোজদার হোসেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলেন,এরপর দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করলেন। কিন্তু বরাদ্দ আসেনি কোন রাস্তা নির্মাণের জন্য। 

তাই নিজ উদ্যোগে,৫-৬ ফুট গভীরতার নালা ভরাট করে দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে প্রয়োজন অন্তত,অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা। রাস্তা নির্মানের জন্য এতো টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে না জেনেও চেষ্টা অব্যাহত রাখেন উপ-পরিচালক। হঠাৎ করে কৃষিবিদ মোজদার হোসেনের মাথায় আসে জেলার বিভিন্ন জায়গা ও রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অটোরাইস মিলের অকেজো, অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ছাইয়ের কথা। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ও অন্যান্য কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় গত ১০ মাস ধরে ছাই দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,আর মাএ ১০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে রাস্তা নির্মাণের কাজ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ববিদ মো.শাজাহান সাহেব(নাটোর) বলেন,আমি এখানে যোগদানের পর দেখেছি মোট ৬৮ একর জমির মধ্যে ১০-১৫ একর জমি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। আমরা ওই বিশাল অংশটুকু ব্যবহার করতেও পারতাম না। উপ-পরিচালক মহোদয় জায়গাটি পরিষ্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। পরিষ্কার করার পর আমরা দেখলাম,এখানে যাওয়া আসার কোন রাস্তা ছিল না৷ যার কারনে বর্ষার সময়ে পুরো এলাকাটি পরিষ্কার করার পরেও পানিতে নিমজ্জিত থাকতো। 

তিনি বলেন উপ-পরিচালক স্যার একজন উদ্ভাবনী শক্তির সম্পন্ন মানুষ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,অটোরাইস মিলের ছাই নেয়ার পরিকল্পনা আসে ডিডি স্যারের মাথা থেকে। সেখানে বিনামূল্যে এই ছাই দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধুমাত্র ছাই দিয়ে সীমানা প্রচীরের পাশ দিয়ে দীর্ঘ ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে ও সম্পূর্ণ রূপে রাস্তাটি নির্মাণের ফলে প্রায় ৩০ বিঘার অধিক পরিমান জমি ব্যবহার করতপ পারবে হর্টিকালচার। যেখানে মাতৃগাছ থেকে বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন করে তা বাজারজাত করা হবে৷ হর্টিকালচার সেন্টারের ডরমেটরি ও স্টাফদের বাসায় যাওয়ার রাস্তা দুটিও ছাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

নবাব অটো রাইস মিলের ছাই বহনকারী ট্রাক্টরের চালক মো. অলি আহমেদ জানান,অটোরাইস মিলের পরিত্যক্ত ছাইগুলো ফেলার কোন নিদিষ্ট জায়গা নেই। তাই আগে আমরা অটোরাইস মিলের ছাইগুলো রাস্তার ধারে ফেলতাম। এতে অনেক মানুষের গালমন্দ শুনতে হতো। অনেক খুঁজে খুঁজে জায়গা বের করতে হতো এগুলো ফেলার জন্য। কিন্তু ডিডি স্যার আসার পর এই ছাইগুলো আমরা গত ১০ মাস থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এনে ফেলছি। 

তিনি আরও জানান,আমরা খুব আশ্চর্য হয়েছি,যে এভাবেও রাস্তা তৈরি করা যায়! নিজেরাই প্রতিদিন ছাই ফেলতে আসি,অথচ বর্তমানে আমাদের তৈরি রাস্তা দেখে আমরাই অবাক হয়। গর্ত,নালা, ডোবা ভর্তি করে ছাই দিয়েই তৈরি হয়েছে চমৎকার বিভিন্ন সাইটে  রাস্তা। একদিকে আমাদের ছাই ফেলার নিদিষ্ট জায়গা পেয়েছি, তেমনি অব্যদিনে হর্টিকালচার সেন্টারে মজবুত একটি রাস্তাও তৈরি হয়ে গেছে। 

অটোরাইস মিলের ট্রাক্টরের ছাই ফেলা শ্রমিক মো. উমর আলী জানান, এখন যেখানে রাস্তা তৈরি হয়েছে, সেখানে অনেক জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। সেগুলো পরিষ্কার করার পর ছাই ফেলছি, আর রাস্তা তৈরি হচ্ছে। আমাদের মালিকের ভালো হয়েছে চাই ফেলার একটি নিদিষ্ট জায়গা পাওয়া গেছে। 

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট