শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ওমিক্রনে ‘মৃদু জ্বরের’ উপসর্গ দক্ষিণ আফ্রিকায়

 

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ আক্রান্ত রোগীদের অসুস্থতা ‘কম গুরুতর’ জানিয়ে রোগীদের কাঁশি ও মৃদু জ্বরের উপসর্গ পাওয়ার কথা বলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা।

গত শনিবার টাইসম অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর আগের ঢেউয়ে ‘ডেল্টা’ ধরনে আক্রান্তদের তুলনায় ‘ওমিক্রন’ আক্রান্তদের মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

দুই সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের এ নতুন ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত করার কথা জানান। আলোচনার সুবিধার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’।

এর আগে বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করা করোনাভাইরাসের যে ধরনটি ভারতে শনাক্ত হয় সেটি নাম পায় ‘ডেল্টা’। ইতোমধ্যে ভারতও জানিয়েছেন পাঁচটি রাজ্যে ৩২ জন ‘ওমিক্রন’ আক্রান্ত হলেও লক্ষণ মৃদু।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের আধিপত্য থাকলেও কয়েক ডজন দেশে ওমিক্রন এর সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দেশটির চিকিৎসক ডা. আনবেন পিল্লে জানান, তিনি দৈনিক কয়েক ডজন কোভিড আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাদের কাউকে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে পাঠাতে হয়নি।

নতুন ধরনটি আরও বেশি দ্রুত গতিতে ছড়ালেও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন আক্রান্তদের ‘মৃদু উপসর্গ’ দেখা দেয় বলে মনে করছেন।

রোগীদের বিষয়ে ডা. পিল্লে বলেন, “তারা ঘরেই এ রোগ থেকে উপশমের ব্যবস্থা নিতে পারেন। বেশিরভাগই ১০ থেকে ১৪ দিনের আইসোলেশনের সময়েই সেরে উঠেন।”

এদের মধ্যে বয়স্ক ও আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি, এমন রোগী রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মহামারীর আগের ঢেউয়ে ডেল্টা ধরনে আক্রান্তদের উপসর্গের কথা তুলে ধরে ডা. পিল্লে বলেন, “তাদের শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার সমস্যা ছিল। অনেককেই কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।”

এই চিকিৎসক জানান, এখন কোভিড আক্রান্ত যেসব রোগীর চিকিৎসা করছেন তাদের কাঁশি ও শরীর ব্যথার মতো মৃদু জ্বরের উপসর্গ দেখতে পাচ্ছেন।

পুরো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় পাঁচ হাজার সাধারণ চিকিৎসকদের একটি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক পিল্লে জানান, তার সহকর্মীরাও ওমিক্রন এর ক্ষেত্রে একই ধরনের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন।

ওমিক্রন এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া গাউটেং প্রদেশে কাজ করেন ডা. আনবেন পিল্লে। দেশটির সবচেয়ে জনবহুল এ প্রদেশের লোকসংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। সবচেয়ে বড় নগরী জোহানেসবার্গ ও রাজধানী প্রিটোরিয়া এ প্রদেশেই।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গাউটেং প্রদেশে নতুন করে সংক্রমণের হার ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের দেওয়া পরীক্ষার তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যে ৯০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে ওমিক্রনে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশটির আরও বেশ কিছু চিকিৎসক একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

তবে তারা সবাই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তথ্যের জন্য আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রাথমিকভাবে পাওয়া নমুনায় এ বিষয়ে শুধু কিছু সূত্র পাওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ এর তথ্য অনুযায়ী :

কয়েক সপ্তাহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মাত্র ৩০ শতাংশ ছিল গুরুতর অসুস্থ। একই সময়ে মহামারীর আগের ঢেউয়ের তুলনায় এ সংখ্যা অর্ধেকেরও কম।

এবার হাসপাতালে থাকার গড় সময় আগের চেয়ে কমে এসেছে। আগের ধরনের সময় এটা ছিল ৮ দিন আর এবার তা কমে হয়েছে ২ দশমিক ৮ দিন।

সম্প্রতি কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মহামারীর আগের ঢেউয়ের সময় এটা ছিল ২০ শতাংশ।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য প্রতিবেদনের তথ্য তুল ধরে ‘আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এর পরিচালক উইলেম হানেকম বলেন, “এই মুহূর্তে কার্যত সবকিছুই নির্দেশ করছে এর উপসর্গগুলো মৃদু।

“এখনতো শুরুর সময়, আমাদের চূড়ান্ত তথ্য পেতে হবে। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনা পরে ঘটে এবং আমরা মাত্র দুই সপ্তাহ ধরে এ ঢেউয়ের মধ্যে আছি।”

করোনাভাইরাসের প্রচলিত টিকা এবং এর চিকিৎসা কতটা কার্যকর সেসব পরীক্ষা করার সময় সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সংক্রমণের সংখ্যা এবং হাসপাতালে ভর্তির হারগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বেসরকারি চিকিৎসা সেবা কোম্পানি ‘নেটকেয়ার’ এর পক্ষ থেকেও কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর লক্ষণ দেখতে পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছেই। গত বৃহস্পতিবার ২২ হাজার ৪০০ জন এবং শুক্রবার ১৯ হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহ্লা জানান, নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত মাসে ৯০ হাজার মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় পুরো দেশে নতুন করে সংক্রমিতদের ৭০ শতাংশ ওমিক্রন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বেড়েছে।”

তিনি জানান, মহামারীর নতুন ঢেউয়ে সংক্রমিত একজন ব্যক্তির মাধ্যমে ২ দশমিক ৫ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ হার দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট