বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্লুইসগেটে ভবদহের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় একাকার

 

যশোরের অভয়নগর উপজেলাসহ ভবদহ অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের ভোগান্তির নাম স্লুইসগেট। তাদের সকল দূর্ভোগের উপলক্ষ অন্যতম কারণ হয়ে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট। এই স্লুুইসগেটের ২১ কপাটের মধ্যে ১৮টি পলির নিচে চাপা পড়ে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অবিলম্বে বন্ধ হওয়া এসব কপাট খোলার পদক্ষেপ না নিলে ও নদী খননের কাজ শুরু না করলে ভবদহ এলাকায় ভয়াবহ স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 


সরেজমিন দেখা যায়, অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নে ভবদহের ভবানীপুরে অবস্থি সবচেয়ে বড় ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের ১৮টি কপাটই পলির নিচে চাপা পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। গেটের দুই পাশে জমেছে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি। ফলে এসব স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। গেটসংলগ্ন শ্রীনদী, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এ তিনটি নদীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। 


জানা যায়, ১৯৬০ সালে যশোর সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলা এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ নামক এ স্থানে পানি নিষ্কাশনের জন্য শ্রীনদীর ওপর নির্মাণ করা হয় ২১ ভেন্ট স্লুুইসগেট। পরবর্তী সময় প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১০/১২ লাখ মানুষের মরণফাঁদে পরিণত হয় এই গেট। স্লুুইসগেটের ২১টির কপাট দিয়ে শ্রীনদী, টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদীসহ বিল কেদারিয়া, বিল বকর ও বিল আড়পাড়াসহ যশোর ও খুলনা এলাকার মোট ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। 


১৯৯৪ সালে বর্ষা মৌসুমে বিলের তীরবর্তী আশপাশের শত শত গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় জলাবদ্ধ এলাকার পানিবন্দি মানুষ আন্দোলন শুরু করলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ভবদহের পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহণ করা হয়। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। সকল অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ও ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া দফায় দফায় টিআরএম প্রকল্প চালু করে ছোট ছোট প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও পরিস্থিতি কোনো উন্নয়ন হয়নি। স্থায়ী সমাধানে দৃষ্টি না দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাকে স্থায়ী রূপ দিয়ে খাতটিকে লুটপাটের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এই অভিযোগ স্থানীয়দের। 


পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ আলম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অব্যবস্থ’াপনা ও স্থানীয় ঘের মালিকদের স্বার্থান্বেষী কর্মকান্ড আমাদের ওপর অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে এ জলাবদ্ধতা। তাছাড়া সম্প্রতি মশিয়াহাটি-আমডাঙ্গা খালখনন কাজ খাল কেটে কুমির আনার মতো হয়েছে। খালটির ডহরমশিয়াহাটি ব্রিজ থেকে সুন্দলী ব্রিজ পর্যন্ত খনন হলেও খালের দুই প্রান্তে বিশেষ করে সুন্দলী থেকে আমডাঙ্গা পর্যন্ত খনন না হওয়ায় মাঝখানে পানি জমা হয়েছে। এবার বর্ষার চাপ বেশি হলে ঘরের মাঝ দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।  তিনি অবিলম্বে স্লুুইসগেটের কপাট সংস্কার ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নদীগুলোর খনন কাজ সম্পন্ন করে তার নাব্য ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন। 
এ বিষয়ে ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটি ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এনামুল হক বাবুল জানান, সব কপাট মেরামত না হলে ভবদহ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া আশপাশের সব নদী ও আমডাঙ্গা খালখনন করে উজানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং বিল কপালিয়াসহ খাল-বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প চালু করলে সমস্যার সমাধান হবে। 


অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর জানান, যশোরের দুঃখ হিসেবে খ্যাত ভবদহের এই জলাবদ্ধতা। মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে যে কোনো মূল্যে এ জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। 


অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম জানান, ভবদহের এ ২১ ভেন্টের স্লুইসগেটটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিষয়টি সম্পর্কে তারা বেশি ভালো বলতে পারবেন। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, আমরা ভবদহ অঞ্চলের সবকটি নদী ও খালখননের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। টিআরএম প্রকল্প বাদ দিলে পানি নিষ্কাশন হবে না তা ঠিক নয়। আমডাঙ্গা খালখনন করে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। তাছাড়া টেকা ও হরিহর নদী খনন করলেও পানি নিষ্কাশিত হবে। তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুত ২১ ভেন্ট স্লুুইসগেটের দুই পাশে জমে থাকা পলি অপসারণ করে গেটটিকে সচল করা হবে।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট