বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর উদযাপন

 

মালয়েশিয়া প্রতিনীধী: বশির আহমেদ ফারুক, 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধায় কুয়ালালামপুরে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের বলরোমে নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয় এবং জমকালো সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অনুষ্টানে দক্ষিণ এশিয়া মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত,তান শ্রী ভিগ্নেশ্বরন,  মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উপমন্ত্রী দাতুক হাজি আওয়াং বিন হাশিম, মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য তুয়ান আহমেদ ফাহমি বিন ফাজদিল, মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ভিবিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থি ছিলেন। 

মুক্তিযুদ্ধ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরে সরকারের নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার জনক ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে লাল এবং সবুজ রঙে রঙ্গিন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্টা করেছেন, তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সম্মানিত ভারতীয় নাগরিকদের ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্মাননা পুরস্কার প্রদানের সুযোগ পেয়েছে, আমাদের সারা বিশ্বের বন্ধুরা, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেছিল। শহীদ ভারতীয় সৈন্য এবং ভারতীয় নাগরিকদের স্মরণে বাংলাদেশও আশুগঞ্জে একটি যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ২০২১ সালের মার্চ মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন।

তিনি বলেন,আমাদের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথভাবে বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনে সম্মত হয়েছেন। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ায় যৌথভাবে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার স্বতন্ত্র সম্মান ও বিশেষত্ব পেয়েছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য আমাদের নয় মাসের দীর্ঘ সংগ্রামের সময় প্রসারিত অটুট সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ গভীরভাবে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমাদের বিশেষ বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

২০২১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জযন্তী, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন,বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী বছর। সকল প্রকার শোষণ, অবিচার ও অসমতা থেকে বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের প্রধান স্থপতি, বাংলাদেশ সরকার ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সালকে “মুজিববর্ষ” বা মুজিববর্ষ হিসাবে ঘোষণা করে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষটি উদযাপন করছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করার প্রস্তুতি চলছে, যেহেতু মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ যেটি ৩১শে জানুয়ারী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে আমি এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলোর অংশ হতে পেরে গর্বিত তিনি।

কোভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত পরিবেশ, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রায় বন্ধ হতে বাধ্য করেছে, তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখনও আশার আলো জ্বালিয়ে চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীনও, ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২৪% রেকর্ড করেছে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বি এন রেড্ডি বলেন, ‘মহামারি করোনার অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং একটি জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ঢাকা ও নয়াদিল্লি ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ১৮টি শহরে এ মৈত্রী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এতো বড় আকারে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ ধরনের মাইলফলক উদযাপনের চেষ্টা আগে কোনো রাষ্ট্র করেনি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের আদর্শিক মানচিত্রকেও বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, অভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ভাষার এ বন্ধন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একসঙ্গে থাকতে না পারার মতো মিথ্যা তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামও বর্ববরতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের অনিবার্যতা প্রমাণ করেছিল।’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা মৈত্রী দিবসের আয়োজনকে যুগান্তকারী উল্লেখ করেন। তারা বলেন, দুই বন্ধু দেশের অভিন্ন মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ১০ দিন আগে ৬ ডিসেম্বর ভারত ও ভুটান স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বের ১৮ টি দেশে মৈত্রী দিবস উদযাপন করছে।

চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ৬ ডিসেম্বরকে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ আপডেট